বিদায় ২০১৮ স্বাগতম ২০১৯
মো: নাজিম উদ্দিন : ২০১৮ সমাপ্ত, ২০১৯ স্বাগত; সময়ের বিরামহীন যাত্রা কোনো যতি বা বিরামচিহ্ন মানে না…..এর মধ্যে কত ফুল ফোটে আর কত পাখী গায়..
পুরানোকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার আগামীর “বিস্ময়কর” ভবসাগরের প্রতিটি ‘ফোটা’কে মূল্য দিয়ে সামনের পথের জন্য শুভকামনার মুঠোবার্তা বা স্ট্যাটাস সব একত্র করলে সারমর্ম দাঁড়ায়: শুভ হোক আগামীর যাত্রা; সুখী সফল হোক সবার জীবন; প্রার্থনা সবার মঙ্গলময় জীবনের তরে….
কিন্তু জীবন সুখী ও সফল করার কাজটা বেশ দুরূহ, কষ্টসাধ্য, মাঝে মাঝে অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেও।
অনেকটা উদাসীনজন কিন্তু অনেক সময় সবচেয়ে সুখী; আবার অনেক সিরিয়াসজন অনেক সময় খুব অসুখী, অসফল!
আর শান্তি, সে তো আরও পরে..
ধন-ঐশ্বর্য যেমন সুখ-শান্তির পরিচায়ক নয়, তেমনি হীনতা-দারিদ্র্যও দুঃখের সমার্থক শব্দ নয়।
তাই, অঢেল ঐশ্বর্যে পরিবেষ্টিত ধনীর দুলাল-দুলালীর আত্মহত্যার হার যেমন অনেক বেশি, তেমনি কিছু হত-দরিদ্রের সন্তানদের অল্প-প্রাপ্তির মাঝে দেখবেন স্বর্গীয় হাসির ফোয়ারা।
আপনি সারা দিন, সারা বছর বা সারা জীবন কিভাবে থাকবেন- তা নির্ভর করবে আপনার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর, সঠিক ধারণার উপর। কিছু বিষয় আপনার হাতে নেই- ঠিক যেমনটি আপনার শারীরিক উচ্চতা, রং বা আঙুলের ছাপের মতো। সেগুলো উপর ওয়ালার উপর হাতে। দোষারোপ কাকে করবেন?
আপনার পার্থিব ও অপার্থিব উন্নতির জন্য নিজ নিজ মত ও ধর্মের সিলেবাস অনুযায়ী সাধনা দরকার; দরকার জানার চেষ্টাও।
একটা স্বল্প-মেয়াদি, একটা মধ্য মেয়াদি আর একটা দীর্ঘমেয়াদি কর্মতালিকা তৈরি থাকুক সামনে।
কাগজে লিখিত না হয়ে মনের খাতায় লিখা হোক। দিন, বছর বা জীবন স্তরের শুরুতে সে অনুযায়ী কাজ শুরু হোক। পদ্ধতি হতে পারে- বেশি কাজ একদিনে না করে সাধ্যমত কাজ নিয়মিত করা..
কি কি থাকতে পারে কর্ম-তালিকায়?
প্রত্যেক প্রত্যুষ আপনার কিভাবে শুরু হবে- তার , যেমন হতে পারে, তাহাজ্জুদ-ফজর-মোরাকাবা-ধ্যান;
প্রত্যেক সকালে হতে পারে সকালের হাঁটাহাঁটি দিয়ে।
পরিবারকে সময় দিয়ে কার্যক্ষেত্রে পূর্ন মনোযোগ দিয়ে যতটুকু সম্ভব আনন্দ নিয়ে কাজ করলে বিরক্তি দূর হয়ে প্রতিটি কাজই উপভোগ্য হবে।
দিন শেষে নিজেকে কিছুটা সময় দিয়ে, স্বজন-বন্ধুদের সময় দিয়ে পরিপূর্ণ করা যায় দিন-সপ্তাহ-জীবন।
নিয়মিত স্বল্প ও দীর্ঘ তালিকায় যা রাখা যায় অবশ্যম্ভাবীভাবে:
প্রতিদিন জ্ঞান-ভাণ্ডারে যোগ হোক কিছু হলেও; বই থাকুক সাথে।
পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি .
পরের জন্য কিছু করুন, চলি।
নিজে হাসার সাথে সাথে পরের জন্য কিছু করে, তার মুখে হাসি দেখে অকৃত্রিম সুখ লাভ করুন।
নিজের মনের খোরাক পূর্ন হোক।
তা হতে পারে ভ্রমণে, পঠনে, লিখনে, নীরব ধ্যানে কিংবা অন্য কোন শখে।
হোক নিয়মিত ভ্রমণ। দেশে-বিদেশে।
ছোটদের সাথে আর বৃদ্ধদের সাথে কাটুক কিছুটা সময়।
বন্ধুত্ব হোক,সম-অসমবয়সীদের সাথেও;
সর্বোপরি, যা আছে, তা নিয়ে পরিতৃপ্ত হলেই শান্তি, প্রশান্তি।
আরব বিশ্বের সুপরিচিত ইসলামিক স্কলার ড. শায়খ আইদ আল কারনি তার এক বক্তৃতায় বলেন, আমাকে যদি পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ উপদেশ করতে বলা হয় তাহলে আমি চারটি বাক্য বলব।
আরো পঞ্চাশ বছর পর যদি আবারো আমার কাছে উপদেশ চাওয়া হয় তাহলেও আমি এই চারটি বাক্যই বলব:
১) লা তাহযান।
অতীত নিয়ে কখনো হতাশ হবেন না।
২) লা তাখাফ: ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করবেন না। তা ন্যস্ত করে দিতে হবে মালিকের উপর।
৩) লা তাগযাব: চলার পথে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতেও রাগ করবেন না।
৪) লা তাসখাত: আল্লাহর কোনো ভাগ্য সংক্রান্ত ফয়সালাকে অবহেলা না করে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার মধ্যেই রয়েছে সফলতা।
সময়টা শেষ হওয়ার আগেই শুরু করা উত্তম; জু কুচ করনাহে,..আসমানও কি ছায়াতলে..
(অর্থাৎ, যা করার , আসমানের ছায়াতলে বা বেঁচে থাকা অবস্থায়ই কর.)
শুভ হোক সকলের পথচলা।
বছর যখন শুরু,
বড় হোক স্বপ্ন-তরু।
লেখক : সমাজকর্মী ,সংগঠক ,ব্যাংকার ও কবি ।