তরুণ বয়সে ভ্রমণ করুন

0 18

নিউজ ডেস্ক : তরুণ বয়সে আপনার ভ্রমণ করা উচিত।পৃথিবীকে দেখা এবং জীবনের পরিপূর্ণতার স্বাদ নেওয়ার জন্য আপনার সময় নেওয়া উচিত।মিশেল এঞ্জেলোর সামনে বসে এক বিকেল কাটান,প্যারিসের রাস্তায় হাঁটুন,কিলিমাঞ্জারো পর্বতে আরোহণ করুন,এপালাচিয়ান পর্বতের চূড়ায় উঠুন,চীনের মহাপ্রাচীর দেখুন।কলোম্বিয়ার কিলিং ফিল্ড দেখে হৃদয় জুড়ান,গ্রেট বেরিয়ার রিফে সাতার কাটুন।এই মূহুর্তগুলোই আপনার বাকি জীবনকে সংজ্ঞায়িত করবে।এই অভিজ্ঞতা গুলোই সারা জীবন আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবে।ভ্রমণ আপনার জীবনকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে পারে যা অন্য কিছু পারেনা।এটি আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যখন আপনি আপনার চেয়ে বৃহৎ জিনিসগুলোকে গুরুত্ব দিবেন।আপনি বুঝতে শুরু করবেন যে,পৃথিবী একইসাথে অনেক ক্ষুদ্র ও বৃহৎ।পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ একবেলা খাবার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করে যাচ্ছে এটি দেখে কষ্ট ও দুঃখের প্রতি নতুন করে আপনার সমীহ আসবে।

তরুণ বয়সেই সংস্কৃতিমনা হয়ে উঠুন।পৃথিবীকে জানুন এবং এখানকার অসাধারন মানুষদের জানুন।পৃথিবী একটি চমৎকার জায়গা,অভূতপূর্ব শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ।এগুলো দেখুন। আমার এমন কিছু মূহুর্ত আছে এবং আমি এই আবেগ গুলোকে অনুভব করেছি।

খেমার রুজ কিলিং ফিল্ড?

দুই বছর আগে আমি নীরবে সেখানে দাড়িয়েছিলাম,আমার দুই কাছের বন্ধুর সাথেও নিশ্চুপ ছিলাম।আমি বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম।সেই ভয়ানক অপরাধ ও নৃশংসতার দ্বারা চালিত হচ্ছিলাম যা আমার সামনের জায়গাটিতেই একসময় সংঘটিত হয়েছিল। আমি হিমশীতল হয়ে দাড়িয়েছিলাম,সেই সকল নর-নারী এবং শিশুর কথা ভাবছিলাম যারা এই দুর্দশা ভোগ করেছিল।আমি আমার পিতামহ এবং তার পরিবারের কথা ভাবছিলাম।আমার পরিবারের কথা ভাবছিলাম যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন সময়ে তারা কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।নির্যাতন হতে বাঁচতে তাদের যুদ্ধ এবং সংগ্রামের কথা।

আমি অবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।স্বার্থপরের মত ভাবছিলাম আমার উপরও আক্রমণ হতে পারে।আমি অনুধাবন করেছি পৃথিবী সম্পর্কে আমার ধারণা কতটা অজ্ঞাত ছিল।আমি বুজেছি নর্থ শিকাগোতে বেড়ে উঠে আমি এখানকার অন্যান্য অঞ্চল বা পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হওয়া অপরাধ কার্যক্রম গুলো নিয়ে কখনো ভাবিনি।

এই সরলতা থেকে আমি বুঝেছিলাম পৃথিবীর পরিধি কতটা বড় হতে পারে।

এখানে দেখার,শেখার এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের কত কি রয়েছে আমি তার সাক্ষী হয়ে রইলাম।

এবং আমি নিজের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি যে আমি ভ্রমণ এবং অন্বেষণের মূল্যায়ন করবো।

সকল সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে এক জীবন যথেষ্ট নয়।কিন্তু তরুণ বয়সে ভ্রমণ অন্য সংস্কৃতি এবং মানুষকে জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।সেই সাথে আমাদের চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ ও এটি।

আমি অগনিত অজুহাত শুনেছি কেন মানুষ ভ্রমণ করেনা অথবা করতে চায়না।আমার অধিকাংশ তরুণ বন্ধুই মনে করে এটি অত্যাধিক ব্যয়বহুল।অন্যরা বলে যে তারা পরবর্তী সময়ে ভ্রমণ করতে পারবে।অনেকে মনে করে এটি পেশাগত অগ্রগতিতে বাঁধা প্রদান করে।

খরচের প্রশ্নটি সমীকরণের মাধ্যমে দেখা যাক।

আমার একজন ভাল বন্ধু রয়েছে যিনি পৃথিবী ভ্রমণ করেছে।সাইবেরিয়ান রেলওয়েতে করে পশ্চিমস্থ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র হতে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছে,একটি ভাল ইউনিভার্সিটি স্কুল পড়ার বাজেটে।আমার আরো বন্ধু আছে যারা ভ্রমণের খরচ যুগিয়েছে (তারা স্থানীয় কাজ খুঁজে বের করেছে বা দূরবর্তী অবস্থান থেকে কাজ করেছে।)

আমি ভিয়েতনাম ও লাওসিয়ান বর্ডার অতিক্রম করেছি ভ্যানে করে।এমন একটি রাস্তায় ড্রাইভ করেছি যেটি তৈরি হয়েছে আমরা ভ্রমণ করেছি বলে।

সুলভ মনে হচ্ছে?হ্যাঁ,এটি কি ভয়ংকর ছিল? কিছুটা।

আর্থিক অবস্থা খুব কম সময়ই ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে।

দ্বিতীয় কারণটি,অনেকেই ভ্রমণ করতে চায়না কারণ তারা মনে করে তারা পরবর্তীতে করবে।এর একটি চমৎকার উত্তর দিয়েছেন লেখক জেফ গোইনস।

কেউ প্রথমে ভ্রমণ করবে এবং ফিরে এসে অনেক মহান জিনিস অর্জন করবে(যেমন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী,চাকরি,নতুন ক্যারিয়ার ইত্যাদি।)এমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশী,উল্টো হওয়ার চেয়ে।

ভ্রমণকে জীবনের একাংশ বানানোর এখনই সময়।নাহলে কখনোই আর হয়ে উঠবেনা।আপনি বলছেন আপনি পরে এটি করবেন।কিন্তু আপনার তরুণ বয়সে এবং দায়িত্ব কম থাকা কালীন সময়ে যদি এটি গুরুত্বপূর্ণ মনে না হয় তবে কবে হবে?

সবশেষে মানুষ মনে করে যে,ভ্রমণ পেশাগত অগ্রগতিকে বাঁধাগ্রস্ত করে।এটি সত্য নয়।

আমি দুটো কর্পোরেট সংস্কৃতিতে কাজের মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছি।দুটো প্রতিষ্ঠানই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার উপর জোর প্রদান করেছে।এসকল সফল বৈশ্বিক কোম্পানি গুলোর সাথে কাজ করতে আপনার অন্য দেশের সংস্কৃতি বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আপনাকে মূল্যবান করে তুলবে।এটি প্রথমে আপনাকে নিজের কোম্পানির মধ্যে পরিচিত করে তুলবে অথবা অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি হিসেবে নতুন অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ করে দিবে।(অধিক দায়িত্ব প্রদান করা)

সর্বশেষ অজুহাত

আমি শুনেছি এই অজুহাতগুলো ব্যবহার করা হয় বিদেশে দীর্ঘদিনের ট্রিপ বা বসবাসের জন্য।

আমার অনেক বন্ধু রয়েছে যারা কাজ হতে এক সপ্তাহের জন্য ও ছুটি নিতে চায়না।বিশ্বাস করুন,ছোট ট্রিপ গুলো উপরের বর্ণিত কারণে অথবা অন্য যেকোন কারণে আপনার ক্যারিয়ারকে অথবা পকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা।

দেশের মধ্যে নতুন কোন জায়গায় ভ্রমণের সুযোগ লুফে নিন অথবা পুরাতন কোন স্থানে কোন বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের জন্য ভ্রমণ করুন।

ভ্রমণ একটি অভিজ্ঞতা-এটি সময় বা ভৌগোলিক কোন সীমা দ্বারা আবদ্ধ নয়।

পৃথিবী যেহেতু ক্রমবর্ধমানভাবে সুসংবদ্ধ হচ্ছে,তাই আপনার এই অজুহাতগুলো ও অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

ভ্রমণের সুযোগ গুলো ধরে রাখার অনেক সুবিধে আছে সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে।পৃথিবীকে জানতে হলে অন্য সংস্কৃতি,মানুষ,তাদের বিশ্বাস,মূল্যবোধ,ধারণা এসব জানা কখনো এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা। অন্বেষন করা,অজানাকে শেখা এবং তাকে মোকাবেলা করা কখনো এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা।

হিসাবনিকাশ করে ভ্রমণ করুন যেটি আপনার জন্য উপযুক্ত ও সঠিক।একটি ভ্রমণকে আপনার জীবনে মূল্যবান ও স্মরণীয় করে রাখতে সকল সুযোগ গ্রহণ করুন।

বিদেশে পাড়ি জমান,ব্যাকপ্যাকিং করে ১২ সপ্তাহ কাটিয়ে দিন,টানা ১ মাস ভ্রমণ করুন,রোড ট্রিপ নিন।

আপনার শহরের চারপাশ অন্বেষণ করুন।আপনার সীবান্তবর্তী কোন শহর ভ্রমণ করুন অথবা অন্য কোন দেশ ভ্রমণ করুন।

তরুণ বয়সেই এটি করুন।একটি নজির স্থাপন করুন।

লিখেছেন এডাম লন্ডন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.