ধর্ম মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীত্বে এগিয়ে নদভী আলোচনায় ৫ সাংসদ

0 1

এমএসকে নিউজ: সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় বর্তমানে ‘মন্ত্রীশূন্য’ অবস্থায় আছে। আলোচনায় আছেন অনেকে। তবে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্বের ভার কার কাঁধে পড়তে যাচ্ছে, তা নিয়ে এখন রাজনীতি পাড়ায় চলছে জোর গুঞ্জন।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরবর্তী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সরকারের বর্তমান মেয়াদের পাঁচ জন সংসদ সদস্যের নাম আলোচিত হচ্ছে বেশি। এই পাঁচ রাজনীতিকের দুই জন চট্টগ্রামের। এক জন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও অন্য জন চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী।

এছাড়া আলোচনায় থাকা অন্য তিন জন সংসদ সদস্য হলেন ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন ও পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন।

এই পাঁচজনের মধ্যে হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী বর্তমানে ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী একই কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পাঁচ সাংসদের মধ্যে যেকোনো একজন মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেতে পারেন। আবার টেকনোক্র্যাট কোটায় নতুন মুখ আসলে, তাও খুব বেশি অপ্রত্যাশিত কিছু হবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সবাই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।

যেভাবে শূন্য হয় পদ

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পান ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। এর দেড় বছর পর সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গত ১৪ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ছিলেন। এরপর থেকে তার পদটি শূন্য রয়েছে।

সংসদ সদস্য নাকি টেকনোক্র্যাট?

সংসদ সদস্য না হয়েও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীত্বের দায়িত্বে থাকার ঘটনা নতুন নয়। সদ্য সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সংসদ সদস্য ছিলেন না। তারপরও ২০১৯ সালে তিনি টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পান। তাই টেকনোক্র্যাট কোটায় কেউ মন্ত্রীত্ব পেলে তা খুব বিস্ময়ের কিছু হবে না। দলের ত্যাগী নেতা কিন্তু এখন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পাননি, এমন কেউ মন্ত্রীত্বের জন্য বিবেচিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আবার সরকারের সুদৃষ্টিতে থাকা আলেম-ওলামাদের মধ্য থেকেও কাউকে মন্ত্রী করা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রখ্যাত আলেম ও শোলাকিয়ার ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নাম ভালোভাবেই আলোচনায় আছে। সরকারের আস্থাভাজন মানুষ হিসেবে পরিচিত এই আলেম বিভিন্ন সময় দেশের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে সরকারের মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবেও একাধিকবার আলোচনায় এসেছে তার নাম। যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।

মন্ত্রী নাকি প্রতিমন্ত্রী?

ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রশ্নটা অনেকদিনের। কে পাচ্ছেন দায়িত্ব? কোন দায়িত্বে থাকছেন তিনি? মন্ত্রী নাকি প্রতিমন্ত্রী?

১৯৮৪ সালের পর থেকে এ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীত্বের মর্যাদা পেয়েছেন মোট আট জন। অন্যদিকে নয় জন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ এফ হাসান আরিফ এক বছর উপদেষ্টা হিসেবে এ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

তাই দায়িত্ব কে পাচ্ছেন, সেটার সঙ্গে তিনি মন্ত্রী নাকি প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন, সে প্রশ্নটা থাকছেই।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নাম আগেও এ পদে আলোচনায় এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একসময় আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবেই তাকে বিবেচনা করা হতো। পরে বিভিন্ন কারণে তিনি নতুন দল গঠন করেন। তবে বর্তমানে জোটসঙ্গী হলেও দলের ‘বাইরের মানুষ’ হিসেবে কতটা মূল্যায়িত হবেন সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর নামও ভালোভাবেই আলোচনায় আছে। বিশেষ করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই নেজামুদ্দীন নদভীকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে তার কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসছেন। ইসলামিক স্কলার হিসেবে পরিচিত নদভী দীর্ঘদিন যাবত আল্লামা ফজজুল্লাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সরকারের শীর্ষ মহলে তার প্রতি যে সুদৃষ্টি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে জাতীয় পর্যায়ের বিবেচনায় হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীকে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন। ময়মনসিংহের সন্তান রুহুল আমিন মাদানী ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এখন পর্যন্ত তিনি দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোচনায় আছেন ঝালকাঠির তিনবারের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি আরব সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া পটুয়াখালীর চারবারের সাংসদ আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে নিয়েও গুঞ্জন চলছে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

কে কী বললেন

মন্ত্রীত্বের আলোচনায় গুঞ্জন, আলোচিতদের মন্তব্য জানতে কথা হয় চট্টগ্রামের দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে। দুজনই অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেবেন উল্লেখ করে এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি।

জানতে চাইলে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমএসকে নিউজকে বলেন, ‘চার মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সংসদীয় কমিটিতেও আছি দীর্ঘদিন। মানুষ চাইতেই পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন, মন্ত্রী করবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

কেন্দ্রের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি এখনও তেমন কোনো কথা হয়নি বলে জানান।

অন্যদিকে প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমএসকে নিউজকে বলেন, ‘নেত্রী আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছেন। দুই বার সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। আমার স্ত্রীকে দলে পদ দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার আর কোনো দাবি নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করে দায়িত্ব দেন, আমি সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের দাবির প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কিছু লিখতে আমি সবাইকে না করে দিয়েছি। আমি কোনো ধরনের তদবির করব না। তাই আমার শুভানুধ্যায়ীদেরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে কিছু লিখতে মানা করেছি।’

তবে তিনিও কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের সংকেত পাননি বলে জানিয়েছেন।

১৯৮৪ থেকে ২০২০ : যারা ছিলেন দায়িত্বে

মাহবুবুর রহমান, মন্ত্রী (০৭.০১.১৯৮৪-২০.০৬.১৯৮৭), অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম, মন্ত্রী (২১.০৬.১৯৮৭-২৬.০৩.১৯৯০), সামসুল ইসলাম, মন্ত্রী (২৭.০৩.১৯৯০-২৯.০৯.১৯৯৩), মাওলানা মো. আব্দুল মান্নান, মন্ত্রী, (০১.০৮.১৯৮৬-২৮.০৮.১৯৯৯), মুফতি মাওলানা ওয়াক্কাস, প্রতিমন্ত্রী (০১.০৮.১৯৮৬-২৮.০৮.১৯৯৯), নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, মন্ত্রী (২৯.০৮.১৯৯৯-০২.০৭.২০০২), কাজী শাহ্ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, প্রতিমন্ত্রী (০৩.০৭.২০০২-০১.০৭.২০০৩), মো. কেরামত আলী, প্রতিমন্ত্রী (০২.০৭.২০০৩-০২.০৭.২০০৪), আব্দুল মান্নান, প্রতিমন্ত্রী (০৩.০৭.২০০৪-৩১.১২.২০০৫), মাওলানা মো. নুরুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী (০১.১২.২০০৫-২৬.০২.২০০৬), মোশারেফ হোসেন শাহ্জাহান, প্রতিমন্ত্রী (২৭.০২.২০০৬-১৪.০৫.২০০৭), মেজর জেনারেল (অব.) ডা. এ এস এম মতিউর রহমান, প্রতিমন্ত্রী (১৫.০৫.২০০৭-০৮.০১.২০০৮), এ এফ হাসান আরিফ, উপদেষ্টা (০৯.০১.২০০৮-২৪.০১.২০০৯), মো. শাহজাহান মিয়া, প্রতিমন্ত্রী (২৫.০১.২০০৯-২০.১১.২০১৩), মো. মুজিবুল হক, মন্ত্রী (২১.১১.২০১৩-১১.০১.২০১৪), অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, মন্ত্রী (১২.০১.২০১৪-০৯.১২.২০১৮), আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রী (১১.১২.২০১৮-০৬.০১.২০১৯) ও অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, প্রতিমন্ত্রী (০৭.০১.২০১৯-১৩.০৬.২০২০)

সুত্র: সি সংলাপ ও এমএসকে নিউজ

Leave A Reply

Your email address will not be published.