জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন : অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী
এমএসকে নিউজ ডেস্ক :: সমগ্র বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবছর এক মাস পবিত্র রমজান মাসট রোযা পালন করেন। এরপর শাওয়াল ও জিলকদ দুই মাস পেরিয়ে আসে পবিত্র হজের মাস জিলহজ। জিলহজের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও পুণ্যময়। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা মতে, এ দশ দিন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠতম দিন। এ দিনগুলোতে ইবাদত ও আমলের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা এ দিনগুলোর কসম করেছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ ১০ রাতের। ’ (সুরা ফাজর, আয়াত: ১-২) তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে জিলহজের প্রথম দশ দিনকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৫৩৫)
মোট চারটি মাসকে আল্লাহ তাআলা পবিত্র ও সম্মানিত করেছেন। তন্মধ্যে জিলহজ অন্যতম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমানগুলো ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিস শরিফে এসেছে, ওই চারটি সম্মানিত মাস হলো-জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।
জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন। এ মাসের প্রথম দশকে রয়েছে আরাফাহ ও কোরবানির দিন। আর এ দু’টি দিনের রয়েছে অনেক বড় মর্যাদা। যেমন হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের সাওমের বিনিময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারার আশা করি। (সহিহ মুসলিম : ২৮০৩)
জিলহজ মাসের প্রথম দশকে নেক আমলের ফজিলত
জিলহজ প্রথম দশ দিনে যেসব নেক আমল করা যেতে পারে-
১.আল্লাহ তায়ালার জিকির করা : এ দিনসমূহে অন্যান্য আমলের মাঝে জিকিরের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যেমন হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে,আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, এ ১০ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। আপনারা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহ আকবার) তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে আদায় করুন। (মুসনাদে আহমদ : ৬১৫৪, হাদিসটি সহিহ)
২. উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা : এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের মহত্ত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল ও তাসবিহ পাঠ করা সুন্নাত। আর এ তাকবিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত প্রচারিত হবে এবং ঘোষিত হবে তাঁর অনুপম তাজিম। জিলহজের প্রথম দশকের দিনগুলোতে পঠনীয় তাকবির হচ্ছে- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
৩. সিয়াম পালন করা : জিলহজের প্রথম ৯ দিনে সিয়াম পালন করা মুসলিমের জন্য উত্তম। কারণ, নবী কারিম (সা.) এ দিনগুলোতে নেক আমল করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর উত্তম সব আমলের মধ্যে সাওম অন্যতম। প্রিয়নবী (সা.) ও এ ৯ দিনে সিয়াম পালন করতেন। তাঁর স্ত্রী হাফসা (রা.) বলেছেন- নবী কারিম (সা.) কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো- আশুরার সাওম, জিলহজের ১০ দিনের সাওম, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সাওম ও ফজরের ফরজের পূর্বের দুই রাকাত সালাত। (মুসনাদে আহমদ : ২৬৪৫৯)
৪. খাঁটি মনে তাওবাহ করা : যেহেতু এ মাসের মর্যাদা অনেক তাই এ মাসে খাঁটি মনে তাওবাহ করা উচিত। কেননা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন ইরশাদ করেছেন : হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো বিশুদ্ধ তাওবাহ; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন। ’ (সূরা তাহরিম : ৮)
৫. হজ ও ওমরাহ আদায় করা : হজ হলো ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, মানুষের মাঝে যাদের সেখানে (মক্কায়) যাবার সামর্থ্য রয়েছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সে ঘরের (কাবা) হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ যদি প্রত্যাখ্যান করে সে জেনে রাখুক নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয়নি সে যেন সে দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে। (সহিহ আল বুখারি : ১৪৪৯) আর এ হজ জিলহজ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা যায় না।
৬. ঈদের সালাত আদায় করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সালাত গুরুত্ব দিয়ে আদায় করেছেন। কোনো ঈদে সালাত পরিত্যাগ করেননি। বরং একে গুরুত্ব দিয়ে তিনি মহিলাদেরও এ সালাতে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৭. কোরবানি করা : এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর নবীকে কোরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কোরবানি করুন।’ (সূরা কাওসার: ২)।
লেখক : অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষা ও গবেষণা ফাউন্ডেশন।