অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ নিয়ে বিতর্ক : মুহাম্মদ আবদুর রহিম
এমএসকে নিউজ :: কলেজে অধ্যাপনা করলে সাধারণ মানুষ তাদেরকে অধ্যাপক বা প্রফেসর বলে সম্বোধন করেন। কেউ বুঝে করেন, কেউ না বুঝে করেন। রাজনীতিকদের অনেকে বেসরকারি কলেজের দু’একদিন শিক্ষকতা করে নামের সাথে অধ্যাপক যুক্ত করে নেন। কেউ কেউ আবার কিন্ডারগার্টেন, প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করে অধ্যক্ষ পদবি ব্যবহার করেন। অবশ্য বর্তমানে স্কুল এন্ড কলেজ নামক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইমারি দিয়ে শুরু করলেও অধ্যক্ষ লেখার সুযোগ পেয়ে যায়। এরকম অনেক অধ্যক্ষকে জানি যাঁরা ইচ্ছে করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা জীবনকে ভিন্নভাবে করতে চেয়েছেন, গড়েছেন। আবার কোন কিছুই করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন খুলে নামের পাশে অধ্যক্ষ লাগানোর নজিরও কম নেই। সরকারি কলেজে কোন সহযোগী অধ্যাপকও যদি নিজের নামের পাশে অধ্যাপক পদবি ব্যবহার করেন, নিঃসন্দেহে তিনি বিভাগীয় সমস্যায় পড়বেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নিজের নামের পাশে নিজে অধ্যাপক পদবী ব্যবহার করা শোভন বলে মনে হয় না। চট্টগ্রাম শহরের এক বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষের নামের পাশে তিনি খুব সুন্দর করে প্রফেসর শব্দটি লাগিয়ে নিয়েছেন। আমি খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি তিনি পূর্বে সরকারি কলেজের প্রফেসর ছিলেন কিনা? পরে জানলাম তিনি একজন ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। যেহেতু রাজনীতি করেন, সেহেতু ইচ্ছেমতো পদবি ব্যবহার করায় উনাকে বাধা দেবে কে? একই পদে থাকা কাউকে আমরা ডাকি প্রফেসর, আবার কাউকে ডাকি প্রভাষক। বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ সম্ভবত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষগণের (যারা পদবীর দিক থেকে প্রফেসর) একই বেতন স্কেলে বেতন পান। এইজন্য অনেকে নিজে অথবা তাদের সন্তানগণ নামের সাথে প্রফেসর লাগিয়ে থাকেন। এটাও মনে হয় শোভন নয়। আবার এটাও ঠিক যে, সরকারি কলেজের প্রফেসর হতে হলে বিশেষ কোন ডিগ্রী বা যোগ্যতার প্রয়োজন হয়না, প্রয়োজন হয় দীর্ঘমেয়াদে চাকুরী। আমি নিজে কখনো কোথাও প্রফেসর হিসেবে পরিচয় দিইনি বা লিখিনি।কেউ বললে বা লিখলে বিব্রত হয়ে সংশোধনী দেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপরও অনেক সিনিয়র ভাই আদর করে প্রফেসর সম্বোধন করেন। আমিও অনেক জুনিয়রকে আদর করে প্রফেসর সম্বোধন করি। নিজেকে নিজে প্রফেসর বললে বা লিখলে অবশ্যই সমস্যা, কিন্তু কেউ যদি শ্রদ্ধা করে, ভালোবেসে কলেজে শিক্ষকতায় রত কাউকে অধ্যাপক বা প্রফেসর সম্বোধন করেন, সে ক্ষেত্রে ঐ বেচারা কী-ই বা করতে পারেন? এক্ষেত্রে সরকারের বিধিবদ্ধ কোন নিয়ম আছে কি?
বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। একজন ডাক্তার এমবিবিএস পাস করে এমডি, এফসিপিএসসহ আরো অনেকগুলো ডিগ্রী নিয়েও তিনি ডাক্তার থাকেন, আবার প্রাতিষ্ঠানিক কোন কোর্স না করেও গ্রামে অনেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে পাস করা লোকজনকে যেমন ইঞ্জিনিয়ার বলি, বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে পাস করা লোকদেরকেও আমরা ইঞ্জিনিয়ার বলি। তাহলে এমএ পাস করার পর একজন লোক যখন কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতা করেন, তখন তার পেশাগত পরিচয় কী হবে? বিষয়টির গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসা প্রয়োজন।
লেখক: সরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।