ইসলাম সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে – আল্লামা আহমদ শফি

0 0

নিউজ ডেস্ক :: হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি (দা.বা) বলেন, আলেম সমাজ নবীদের উত্তরসূরি। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জাতিকে নির্দেশনা দেয়া তাঁদের কর্তব্য। শাসক ও জনগণকে নসিহত করা তাদের জিম্মাদারি। কল্যাণের প্রতি আহ্বান জানানো ও অকল্যাণের প্রতিরোধ করতে আলেমদের স্বয়ং আল্লাহ ও মহানবী (স:) নির্দেশ দিয়েছেন। তাই কোনো অবস্থাতেই আলেম সমাজের পক্ষে এ দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আল্লামা আহমদ শফী বলেন, মানুষের ঈমান-আকিদার হেফাজত করা, মানুষকে পরকালমুখী করা, প্রচলিত শিরক-বিদআত ও কুসংস্কারসমূহ রদ করা এবং শরিয়তবিরোধী সব কর্মকান্ড প্রতিরোধে ভূমিকা পালনের শিক্ষার পাশাপাশি দেশপ্রেম এবং জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসার শিক্ষা দেয় হয় মাদ্রাসা সমূহে; শিক্ষা দেয়া হয় উগ্রবাদ ও ইসলাম বিরোধী সব চরমপন্থার বিরুদ্ধে। ওলামায়ে কেরামদের প্রচেষ্টার কারনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাস করছে। ইসলাম সবসময় মানবাধিকার, শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার কথা বলে, অমুসলিম সম্প্রদায়কে নিরাপত্তাদানের কথা বলে এবং বাংলাদেশের মুসলমানগণ বারবার তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে বলে দাবি করে আল্লামা আহমদ শফী বলেন, এ দেশে মানবপ্রাচীর তৈরি করে মন্দির পাহারা দেয়ার নজীর আমরা দেখিয়েছি। অথচ ভারতে এর উল্টো চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, দিল্লীতে মুসলমানদের উপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতন পরিষ্কার রাষ্ট্রীয় নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যার পাশাপাশি পবিত্র স্থান মসজিদে আগুন দেয়া হয়েছে, খুঁজে খুঁজে মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নি-সংযোগ করা হয়েছে। ভারতের শত শত বছরের ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ঐতিহ্যের অবদানে মুসলমানদের নাম মিশে আছে- এমনটি দাবী করে তিনি আরও বলেন, ভারতের ঐতিহাসিক বহু স্থাপত্য মুসলমানদের তৈরি। চাইলেই এসব মুছে দেয়া যায় না। বিজেপিসহ কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো ভারতকে মুসলিমশূন্য করার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক যে নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে তা মোদি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পতন ডেকে আনবে দাবী করে তিনি বলেন, ভারতের উচিৎ নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা।

তিনি ১ মার্চ রবিবার সাতকানিয়া মাদার্শা বাবুনগর মাদ্রাসা ইয়াছিন মক্কী আল্ কাছেমিয়্যাহ হেফজখানা এতিমখানা ও আল্লামা নুরুল হুদা স্মৃতি সংসদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা গুলো বলেন।
মহাসম্মেলনের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের সাংসদ প্রফেসর আল্লামা ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। উদ্বোধকের বক্তব্যে ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি বলেন, ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ধর্ম। জোর জবরদস্তী, নৃশংসতা ও নিরপরাধ মানুষ হত্যা শান্তির ধর্ম ইসলাম কখনো স্বীকৃতি দেয়না। তিনি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃত ইসলাম ধর্মকে নবী করিম (স.) অনুসৃত পন্থায় উপস্থাপনের জন্য ওয়জিনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওয়াজ মাহফিল মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করার বড় একটা মাধ্যম। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে ধর্মপ্রাণ মানুষজন ধীরে ধীরে ওয়াজ মাহফিলের প্রতি বিরুপ মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। পারস্পপরিক সমালোচনা, কাদা ছোড়াছুড়ি, দোষারোপ ইত্যাদির সমাহার চলছে। অনেকে আবার ইউটিউবসহ সামাজিক নেটওয়াার্ককে ব্যবহার করেও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। বিভিন্ন ঘরানার বক্তাদেরকে পরস্পরের ওপর উসকে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ধর্মীয় মতনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলছে। অনেকে আবার ওয়াজ মাহফিলের অন্তরালে সুক্ষভাবে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে।
মহাসম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আল জামেয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া’র মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আব্দুল হালিম বোখারী। প্রধান ওয়ায়েজ ছিলেন আল্লামা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী কুয়াকাটা। বাদ ফজর হতে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ আলেম আল্লামা হাবিবুল্লাহ, আল্লামা মুফতি গোলাম কাদের, আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজি, মাওলানা আব্দুল মোবিন, মাওলানা আমির আহমদ।
তাকরির পেশ করেন-জামেয়া জিরি পটিয়া’র মহাপরিচালক আল্লামা শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব, আল্লামা ড. আ.ফ.ম খালেদ হোসাইন, আল্লামা মুফতি ফয়েজুল্লাহ, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযা, আল্লামা আব্দুর রহিম আল মাদানী, আল্লামা আলতাফ হোসেন, আল্লামা আশরাফ আলী গাজী, মাওলানা মহিউদ্দিন হেলালী, মুফতি হাবিবুল ওয়াহেদ, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মারুফ প্রমুখ।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.