পূর্ব বাকলিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে পমা’র পরিবেশ বিষয়ক মতবিনিময় সভা

0 0

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব বাকলিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে পরিবেশ ও মানবাধিকার আন্দোলন পমা আয়োজিত ‘প্রাণ-প্রকৃত ও পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক অতি নিবিড়। কারণ প্রকৃতির কোলেই মানুষের বসবাস। তাই প্রকৃতির ক্ষতি হলে মানুষেরও ক্ষতি হয়। কিন্তু আমরা আজ নানা ভাবেই প্রকৃতির ক্ষতি করে চলেছি। আজ প্রাকৃতিক পরিবেশ ভয়াবহ দূষণের শিকার। এতে চরম বৈরী হয়ে উঠছে আবহাওয়া। পরিণামে বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। উষ্ণতার কারণে বরফ গলে যাচ্ছে হিমালয় এবং মেরু অঞ্চলের।

এতে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। পরিণামে তলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিশাল নিম্নাঞ্চল। চট্টগ্রামের একটি বড় অংশও এর আওতাভুক্ত। পানি, বায়ু, শব্দদূষণ দিন দিন মাত্রা ছেড়ে যাচ্ছে। এতে হানা দিচ্ছে নানা রোগব্যাধি, ধংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হচ্ছে খাদ্যশৃঙ্খল। বিনাস হচ্ছে সভ্যতা। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানব-অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই সময় থাকতেই পরিবেশ সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে এবং সকলেই যার যার অবস্থান থেকে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে কাজ করলে একটি বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্যে পরিবেশের সুরক্ষা সম্ভব হবে। আর এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গতকাল (২২ আগস্ট) সোমবার অধ্যক্ষ মো. আবু তালেব বেলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পমা’র চেয়ারপারসন শিক্ষাবিদ-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা। পমা’র সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আবসার মাহফুজ এর স্বাগত বক্তব্যে সূচিত অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন পমা’র নির্বাহী সভাপতি প্রাবন্ধিক-গবেষক আমিনুর রশীদ কাদেরী। সহকারি শিক্ষক আমিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলামিস্ট-সমাজকর্মী মুহাম্মদ মুসা খান, প্রাণ-প্রকৃতি সম্পাদক শারূদ নিজাম, নজরুল গবেষক ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং তরুণ সমাজসেবী মো. রুহুল আমিন রবিন। অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত সহকারি প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা চৌধুরী, সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মাওলানা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী, লিপি বড়–য়া ও আবদুল হান্নান। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন মিশকাতুন্নেসা মাহিন এবং মেহরুবা বিনতে আফরাহ। পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পমা’র প্রকৃতি ও পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি চলমান আছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা বলেন, চলতি শতাব্দীতে পৃথিবী যে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে তার মূল হলো বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্যে আবহাওয়া ও জলবায়ুতে পরিবর্তন আসার ফলে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরা, অতি বৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবাইকে পরিবেশ সচেতন করার মাধ্যমেই কেবল এ অবস্থার অবসান হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা প্রাবন্ধিক আমিন কাদেরী বলেন, সন্দেহাতীতভাবেই বর্তমান সময়কালকে চিহ্নিত করা যায় প্রকৃতি ও পরিবেশের চরম সংকটের কাল হিসেবে। পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে এই ঘনায়মান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নিতে হবে। একটি গাছ সাড়ে ১৩ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাস থেকে গ্রহণ করে। ৫ কেজি অক্সিজেন বাতাসে ছাড়ে। যা ৫ জনের অক্সিজেন ঘাটতে পূরণ করে থাকে। সবাই বৃক্ষনিধন বন্ধে ও বৃক্ষরোপনে কার্যকর ভূমিকা রাখলে এই পৃথিবী সত্যিই বাসযোগ্য থাকবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.